ড. আহসান এইচ মনসুর
বাংলাদেশের আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ‘কেমন বাজেট চাই’; এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ, অর্থনীতিবিদ ও অংশীজনের মতামত জানতে চেয়েছে ভয়েস অফ আমেরিকা। বাংলাদেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর এ বিষয়ে তাঁর মতামত জানিয়েছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রেদওয়ানুল হক।
ভয়েস অফ আমেরিকা: এবারের বাজেটে কোন কোন খাতে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত? কেন?
আহসান এইচ মনসুর: রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। এ ছাড়া শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতে কোয়ালিটি ও কোয়ান্টিটি বাড়াতে হবে। এখানে ব্যয় কিছুটা হলেও বাড়াতেই হবে।
সরকারের সুদের ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে, এটা শিগগিরই এক লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। রাজস্ব বৃদ্ধির চেয়ে সুদের ব্যয় বাড়ছে– এটা বিপজ্জনক পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে সরকার; শুধু ঋণ করে সরকার চালানো যাবে না।
ভয়েস অফ আমেরিকা: বাজেট বাস্তবায়ন সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কী কী করা দরকার?
আহসান এইচ মনসুর: বাস্তবায়ন সবচেয়ে খারাপ হয় রাজস্ব খাতে; প্রতিবছরই ঘাটতি থেকে যায়। বড় ধরনের সংস্কার না হলে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। আমরা বৈপ্লবিক পরিবর্তনের অপেক্ষায় আছি। আমাদের আয় অন্তত দ্বিগুণ হতে হবে। বর্তমানে আমরা জিডিপির ৮ শতাংশ আয় করি; ভারত আয় করে ১৮ শতাংশ। আমরা যদি ১৮ শতাংশে যেতে পারি, তাহলে সরকারের আর কোনো সমস্যাই থাকবে না। বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে এ বছরের জন্য বাজেটের আকারে সংযত হতে হবে। ব্যয় কমাতে হবে। ব্যাংকের ঋণ কমাতে হবে।
ভয়েস অফ আমেরিকা: আয় বাড়ানোর জন্য কী করা দরকার?
আহসান এইচ মনসুর: রাজস্ব সংগ্রহ ও রাজস্ব নীতি আলাদা করতে হবে। রাজস্ব নীতি এনবিআর থেকে আলাদা করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি বিভাগের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে; যেখানে রাজস্ব নীতি প্রণয়নকারী কর্মকর্তারা ফুলটাইম কাজ করবে। সারা বছরই নীতিতে কিছু না কিছু পরিবর্তন আনবে। এটি চলমান প্রক্রিয়া, চলতে থাকবে।
ভয়েস অফ আমেরিকা: কোন কোন খাতে খরচ কমানো উচিত?
আহসান এইচ মনসুর: অপ্রয়োজনীয় দপ্তর কমানো দরকার। যেমন বস্ত্র ও পাট, সড়ক-পরিবহন, নৌ-পরিবহন; এসবের সংখ্যা কমিয়ে এনে ব্যয় সংকোচন করতে হবে। এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ছে; স্কুল আছে, শিক্ষক আছে, কিন্তু শিক্ষার্থী নেই। কোনো কোনো স্কুলে এক ক্লাসে একজন ছাত্র; এসব স্কুলকে প্রয়োজনে একীভূত করতে হবে। আবার যেখানে শিক্ষার্থী আছে, সেখানে মান বাড়াতে হবে। সরকারি বেতন-ভাতা ও পেনশন খাতে ব্যয় বাড়ছে। এটা আর বাড়তে দেওয়া যাবে না।
ভয়েস অফ আমেরিকা: আইএমএফ বাজেটের আকার ছোট রাখতে বলেছে, আপনি কি একমত? কেন?
আহসান এইচ মনসুর: বাজেটের আকার আমরাও ছোট রাখতে বলেছি। সরকারও মনে হচ্ছে ছোটই রাখবে। আসলে সামগ্রিক বিবেচনায় আমাদের বাজেট ছোটই আছে।
ভয়েস অফ আমেরিকা: কোন তিনটি খাতে সংস্কার সবচেয়ে জরুরি– কেন? কী করা উচিত?
আহসান এইচ মনসুর: সংস্কার অগ্রাধিকার হলো, রাজস্ব আয় এবং ব্যাংকিং খাত বা সামগ্রিক অর্থে আর্থিক খাত। এ ছাড়া সরকারের ব্যয় স্বচ্ছতা আনতে হবে, দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। বর্তমান প্রশাসন পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে হবে, এটি করতে পারলে ঘুষ দুর্নীতি কমে যাবে।
ভয়েস অফ আমেরিকা: বাজেট তৈরির সময় কোন কোন চ্যালেঞ্জের কথা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মাথায় রাখা দরকার?
আহসান এইচ মনসুর: অর্থনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় রাজস্ব আহরণ এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার ঠিক করতে হবে। বাজেটের আকার সীমিত রাখতে হবে। ঋণ কমাতে হবে।
ভয়েস অফ আমেরিকা: গত পাঁচ বছরের বাজেট পর্যালোচনা করলে কোন দুর্বলতা, সীমাবদ্ধতা বা ভুলগুলো চোখে পড়েছে? এগুলো অ্যাড্রেস করা হয়েছে কি? কী করা উচিত?
আহসান এইচ মনসুর: রাজস্বের ব্যর্থতার ফলে বাজেটের সাইজ কমে আসছে। ব্যয় সংকুচিত করতে পারছি। ফলে অর্থনীতি কিছুটা স্থিতিশীল আছে, কিন্তু ব্যয় কমিয়ে বেশিদিন টিকে থাকা যাবে না। বর্তমানে সরকারের ব্যয় ১৭ শতাংশ থেকে সাড়ে ১৩ শতাংশে নেমেছে; এটি আর কমানো ঠিক হবে না। বিদ্যুৎসহ কিছু খাতে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে, সেটি কীভাবে কমানো যায় সেদিকে নজর রাখতে হবে।
ভয়েস অফ আমেরিকা: অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে লিঙ্গসমতা অর্জনের জন্য বাজেটে কী সংযোজন বা বর্জন করা যেতে পারে?
আহসান এইচ মনসুর: ব্যাংক খাতে নারীরা ঋণ পাচ্ছে না। সব মিলিয়ে ১-২ শতাংশ পায়, এখানে সমতা আনতে হবে। এ ছাড়া বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে হবে। আইন থাকলেও এটি অহরহ হচ্ছে।
ভয়েস অফ আমেরিকা: গত পাঁচ বছরে বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতার বিচারে সরকারকে ১০-এ কত দেবেন?
আহসান এইচ মনসুর: এক্সপেন্ডিচার কন্ট্রোলের ক্ষেত্রে ১০-এ ৯ দেব। এ ছাড়া রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে ৩-৪ এবং ব্যয়ের কোয়ালিটির ক্ষেত্রে ৪-৫ দেওয়া যায়।
https://www.voabangla.com/a/7623047.html