বাজেট প্রণয়নের পদ্ধতিতেই গলদ আছে

বাজেট প্রণয়নের পদ্ধতিতেই গলদ আছে

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বাজেট প্রণয়নের ক্ষেত্রে নানা ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়। আমাদের দেশের বাজেট আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রণীত হয়।

একই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাজেট শেষও হয়। বাজেট সবসময় সরকারই প্রণয়ন করবে। সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে অর্থ মন্ত্রণালয় বাজেট প্রণয়ন করবে। এতে কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু যখন বাজেট প্রস্তাবনা তৈরি করা এবং পরে জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হয়-সেখানেই আমাদের ব্যর্থতা সবচেয়ে বেশি।

সংসদে বাজেট প্রস্তাবনা উপস্থাপিত হওয়ার পর তা খুব চুলচেরা বিশ্লেষণ করে দেখা হয় না। অনেক ক্ষেত্রে সংসদের সেই সামর্থ্যও নেই। সংসদ সঠিকভাবে বাজেট বিশ্লেষণ করতে পারে না। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে বাজেট প্রস্তাবনা বিশ্লেষণের জন্য সংসদীয় সাব-কমিটি থাকে। বাজেটবিষয়ক কমিটিও থাকে। তারা প্রস্তাবিত বাজেট পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে।

কিন্তু আমাদের এখানে সংশ্লিষ্ট কমিটি থাকা সত্ত্বেও সেভাবে বিশ্লেষণ করা হয় না। আমাদের দেশে প্রক্রিয়াটা গতানুগতিকভাবে নামমাত্র বিশ্লেষণের মাধ্যমে একদিনের মধ্যেই খুব সংক্ষিপ্ত সময়ে অনুমোদন করা হয়। অত্যন্ত স্বল্প সময়ের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করা হয় বলে সাব-কমিটির পক্ষে বাজেট প্রস্তাবনা সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয় না।

উন্নত দেশগুলোয় দেখা যায়, যারা বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তাদের এ সাব-কমিটির কাছে বিভিন্নভাবে জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হয়। অংশীজনের পক্ষ থেকে তাদের নানাভাবে প্রশ্ন করা হয়। বাজেটে এটা কেন করা হচ্ছে, কেন এটা করা হবে না-এমন হাজার প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় তাদের।

ফলে প্রস্তাবিত বাজেট অনেক ক্ষেত্রেই বড় ধরনের সংশোধন করা হয়। এমনকি জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের পরও প্রস্তাবিত বাজেটের বিভিন্ন বিষয় পরিবর্তন বা সংশোধন করা হয়। কমিটি যদি প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন না করে, তাহলে তা সংসদে উপস্থাপিত হবে না।

এ ধরনের বিশ্লেষণ পদ্ধতি ও জবাবদিহিতা আমাদের দেশে বলতে গেলে প্রায় অনুপস্থিত। ফলে আমাদের এখানে যে বাজেট প্রণীত হয়, তা প্রক্রিয়াগতভাবেই অগণতান্ত্রিক এবং প্রচণ্ড আমলাতান্ত্রিক। বাজেট প্রস্তাবনা জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের পর সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করার সুযোগ থাকে না। সংসদ সদস্যদের বাজেট নিয়ে আলোচনার জন্য যে সময় দেওয়া হয় তা মোটেও পর্যাপ্ত নয়। এ সামান্য সময়ে বাজেটের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সঠিকভাবে আলোচনা এবং সুপারিশ প্রদান করা সম্ভব হয় না।

আবার কোনো কোনো সংসদ-সদস্য প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে আলোচনার জন্য যে স্বল্প সময় পান, তা নানা রকম অপ্রাসঙ্গিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা ও প্রশংসা করার কাজে ব্যবহার করেন। অনেক সময় তাদের এলাকার সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। ফলে বাজেট নিয়ে আসলে তেমন কোনো ফলপ্রসূ আলোচনা সংসদে হয় না। তাই অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যেভাবে বাজেট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করা হয়, ঠিক সেভাবেই অনুমোদিত হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অতি সামান্য পরিবর্তন-পরিমার্জন করা হলেও বাজেটের মূল সুর ও বিষয়বস্তু একই থাকে।

বাজেট প্রণয়নের এ গতানুগতিক প্রক্রিয়া আমাদের জন্য অত্যন্ত হতাশাব্যঞ্জক। যেহেতু সঠিকভাবে আলোচনার মাধ্যমে বাজেট প্রণীত হয় না, তাই বাজেটে জনগণের চাওয়া-পাওয়া সেভাবে প্রতিফলিত হয় না। বস্তুত আমাদের দেশে যেভাবে বাজেট প্রণীত হয়, তাকে আমি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বলে মনে করি না। বাজেট প্রণয়নের পদ্ধতি একটি আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পরিণত হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, আগের বছরের জন্য যে বাজেট প্রণীত হয়েছিল, এর সাফল্য-ব্যর্থতা নিয়ে কোনো পর্যালোচনা সংসদে করা হয় না। কোন খাতে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যায়নি, কেন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলো না, এজন্য কে বা কারা দায়ী-এসব নির্ধারণ করা হয় না। প্রতিবছর বাজেটে নানা ধরনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়; কিন্তু বছর শেষে তার অধিকাংশই অনার্জিত থেকে যায়। এ জন্য কাউকেই জবাবদিহি করতে হয় না।

আগের বছরের বাজেটে যে পরিবর্তনগুলো হয়, তা সংসদে ধ্বনি ভোটে পাশ হয়। স্বল্পতম সময়ের মধ্যে আগের বছরের বাজেট অনুমোদন করিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু আমি মনে করি, এখানেই বেশি সময় দেওয়া উচিত। কেন রাজস্ব আদায়ের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হলো না, কেন জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলো না, কেন সামাজিক বেষ্টনী খাতে আরও বেশি পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা গেল না-এসব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থতার কারণগুলো চিহ্নিত করে পরবর্তী বছরের জন্য বাস্তবসম্মত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। আগের বছরের বাজেটের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাগুলো কেন অর্জিত হলো না, তা সাব-কমিটিতেও আলোচনা হয় না। পূর্ণাঙ্গ বাজেট অধিবেশনেও সঠিকভাবে আলোচিত হয় না। ভাবা হয়, যা হওয়ার হয়ে গেছে, যেভাবে সংশোধিত ব্যয় প্রস্তাব করা হয়, তা পাশ করে দাও। প্রতিবছরই বাজেট বাস্তবায়নে ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু পরবর্তী বছরের বাজেটে সেই ব্যর্থতা অতিক্রম করার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না। বরং আবারও ব্যর্থতার জন্যই যেন বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। অর্থাৎ বাজেট প্রক্রিয়া থেকে আমরা শিক্ষণীয় কোনো কিছু গ্রহণ করছি না। ফলে বাজেট প্রক্রিয়াটা উন্নত হচ্ছে না। বাজেটে বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রার প্রক্ষেপণ উন্নয়ন ঘটছে না।

বাজেটে প্রতিবছর রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় তা অর্জনে আমরা কেন ব্যর্থ হচ্ছি, এ ব্যর্থতার জন্য কারা দায়ী-এসব বিষয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করছেন, সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হলেও কাউকে এজন্য জবাবদিহি করতে হচ্ছে না। সংসদ সার্বভৌম সংস্থা, কিন্তু সংসদ তার সেই ক্ষমতা ব্যবহার করছে না বা করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এটা খুবই দুঃখজনক। জাতীয় বাজেট যেহেতু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, তাই প্রয়োজনে বাজেট আলোচনা দুমাস ধরে চলতে পারে।

বাজেট আলোচনা দীর্ঘ হলেও কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। সরকার আগের বাজেট মোতাবেক কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকবে। নতুন বাজেট পাশ হওয়ার পর সেই অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করবে। প্রতিবছর ৩০ জুনের মধ্যেই বাজেট পাশ হতে হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা থাকা উচিত নয়। আমি মনে করি, বাজেট প্রণয়নের যে প্রক্রিয়া, তা সন্তোষজনকভাবে শেষ করতে হবে। কোনোভাবেই তাড়াহুড়া করা যাবে না।

আমাদের দেশে যে বাজেট প্রণয়ন করা হয়, তাতে স্বচ্ছতার প্রচণ্ড ঘাটতি থাকে। আমরা অনেক ক্ষেত্রে বিপুল অর্থব্যয় করি, কিন্তু সে ব্যয়ের বিষয়টি বাজেটে পরিষ্কারভাবে প্রদর্শন করা হয় না। উদাহরণস্বরূপ প্রতিরক্ষা বাজেটের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। সংসদে প্রতিরক্ষা বাজেট নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা হয় না। বাজেটে লেখা থাকে প্রতিরক্ষা খাতে কত টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

এ অর্থ কোন খাতে কতটা বরাদ্দ করা হয়েছে তার বিস্তারিত কোনো বিবরণ বাজেটে থাকে না। ফলে এ বিষয়ে সংসদে কোনো আলোচনার সুযোগ থাকে না। প্রতিরক্ষা খাতের গোপনীয়তা সব দেশেই মেনে চলা হয়। তারপরও অনেক তথ্য জনগণকে জানাতে হয়। আমরা কিন্তু সেটা করছি না। আমাদের দেশে যেভাবে এক লাইনে ডিফেন্স বাজেটের উল্লেখ করা হয়, পৃথিবীর কোনো উন্নত দেশে, এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও তা করা হয় না। আমি মনে করি, প্রতিরক্ষা বাজেট আলোচনার ঊর্ধ্বে থাকার কোনো বিষয় নয়। জনগণের জানার অধিকার রয়েছে তাদের দেওয়া করের অর্থ কোথায় কীভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

ডিফেন্স বাজেট নিয়ে সংসদে আলোচনার ব্যাপারে আমাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। যেহেতু এক্ষেত্রে জনগণের টাকা ব্যবহার করা হচ্ছে, কাজেই জনগণের কাছে তাদের জবাবদিহি করতে হবে। কোন কোন খাতে অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে, তার একটি বিভাজন থাকা উচিত। যেমন অস্ত্র ক্রয় বাবদ এত টাকা, সেনা সদস্যদের বেতন-ভাতা বাবদ এত টাকা, পেনশন খাতে এত টাকা ইত্যাদি বিভাজন থাকা প্রয়োজন। অনেক বিষয় আছে, যেখানে হয়তো প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় হচ্ছে, কিন্তু খরচটা অন্য খাত থেকে আসছে।

অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, যারা পরোক্ষভাবে প্রতিরক্ষা খাতকে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে, যেমন সেনাকল্যাণ সংস্থা ইত্যাদি। বিভিন্ন বড় বড় কন্ট্রাক্টিং আছে। এসব জনগণের জানার জন্য উন্মুক্ত করা প্রয়োজন। বিদেশে সেনা সদস্যদের পাঠিয়ে যে অর্থ উপার্জিত হচ্ছে, তা কীভাবে কোন খাতে ব্যয় হচ্ছে, মানুষকে তা জানাতে হবে।২.

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ অনুমোদন দিয়েছে। এ ঋণের বিপরীতে সংস্থাটি বাংলাদেশকে বেশকিছু শর্ত দিয়েছে, যা পরিপালনের জন্য সরকার লিখিতভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আইএমএফ চাইবে বাজেটে এসব শর্তের প্রতিফলন ঘটুক। তারা ব্যাংক খাতের সংস্থারের কথা বলেছে। যদিও ব্যাংক খাত হচ্ছে বাজেটের বাইরের একটি ইস্যু।

তবে ব্যাংক খাত যেহেতু ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টর সম্পৃক্ত কোর এরিয়া, তাই এ খাত আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতিকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে, সহায়ক ভূমিকা রাখে। কাজেই ব্যাংক খাত নিয়ে কোনো ভালো পলিসিগত স্টেটমেন্ট বাজেট বক্তৃতায় থাকা উচিত। এটা বাজেটের মধ্যে থাকবে না, তবে বাজেট বক্তব্যে থাকতে পারে।

কারণ আইএমএফের কাছে সরকার ব্যাংক খাতের সংস্কার বিষয়ে ভালো ভালো বেশকিছু অঙ্গীকার করেছে। যেমন, নন-পারফর্মিং লোনের হার ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব? সরকার কীভাবে নন-পারফর্মিং লোনের হার ১০ শতাংশে নামিয়ে আনবে, এর একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ থাকতে হবে। বাজেট বক্তৃতায় আমরা এ ব্যাপারে কিছু নির্দেশনা আশা করি। আমরা প্রত্যাশা করব, সরকার এক্ষেত্রে দৃঢ় ও বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে।

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবনায় মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হতে পারে। বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে। আগামী দিনে মূল্যস্ফীতির হার ৬ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব; তবে এজন্য বেশকিছু কাজ করতে হবে, এমনি এমনিই মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নেমে আসবে না। ভারতসহ বিশ্বের অনেক দেশই মূল্যস্ফীতির হার কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। ভারতের হোলসেল প্রাইস ইনডেক্স ৪ শতাংশে নেমে এসেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে চলে গিয়েছিল। এখন তা ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। আগামী দিনে আরও কমে আসবে। হয়তো তাদের মূল্যস্ফীতির হার ৩-৪ শতাংশের নিচে নেমে আসতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব আমেরিকা) পলিসি রেট এক বছরের মধ্যে অন্তত ৭ বার বাড়িয়েছে। এতে ব্যাংক ঋণের সুদের হারও আনুপাতিক হারে বেড়েছে। এর ফলে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ কমে গেছে। ফলে মূল্যস্ফীতি আপনাআপনিই কমে এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক পলিসি রেট বাড়ালেও অন্যসব রেট ফিক্সড করে রেখেছে। ফলে পলিসি রেট বাড়ানোর কোনো প্রভাব বাজারে পড়ছে না।

ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা এখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিনি। আমরা বলি, বোরো ধান ভালো হবে, আমন ধান ভালো হবে। ভাবখানা এমন যে, আমরা শুধু ধান দিয়েই মূল্যস্ফীতি থেকে রেহাই পাব। ধানের ভালো উৎপাদন হওয়ার কারণে আমরা বেঁচে যাচ্ছি ঠিকই, কিন্তু শুধু এটা দিয়ে তো মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নামবে না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য আমাদের কার্যকর ও বাস্তবধর্মী কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

মূল্যস্ফীতি যদি আগামী দিনে আরও ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় থাকে, তাহলে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। শ্রীলংকায় মূল্যস্ফীতির হার ৬৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল, যা এখন ৩২ শতাংশে নেমে এসেছে। পাকিস্তানে মূল্যস্ফীতি বর্তমানে ৩৩ শতাংশ, যা আগামী দিনে আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে আইএমএফ তাদের ঋণদানের সময় কিছু শর্ত দেবে, যা তাদের মূল্যস্ফীতিকে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারে।

তুরস্কে মূল্যস্ফীতির হার ৭৫ শতাংশ। বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি আরও ঊর্ধ্বমুখী হতে খুব একটা সময় লাগবে না, যদি সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা না হয়। কিন্তু মূল্যস্ফীতির হার নিম্নমুখী হতে সময় লাগে এবং কৃচ্ছ্রসাধন করতে হয় সাধারণ মানুষকে। কাজেই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় থাকা মূল্যস্ফীতি এমনিতে কমবে না; এজন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। (অনুলিখন : এম এ খালেক)

ড. আহসান এইচ মনসুর : অর্থনীতিবিদ; নির্বাহী পরিচালক, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)

https://www.jugantor.com/todays-paper/sub-editorial/

Dr. Ahsan H. Mansur

Dr. Ahsan H. Mansur

Dr. Mansur started his career as a Lecturer, Department of Economics, Dhaka University in 1976. He left for Canada for higher studies in economics in the same year. As a graduate student and research assistant, he was also offering regular economics courses at the undergraduate level at the University of ...

gog