নীয় একটি দৈনিকের ভাষায় ‘নির্মম শ্রমশোষণ’-এর মধ্য দিয়েও বাংলাদেশের
তৈরি পোশাকশিল্পের ‘বিস্ময়কর সাফল্য’ অনেকটাই পরস্পরবিরোধী শোনায়। বাস্তবতা হয়তো তুলনামূলকভাবে ভালো। ছোট এ শ্রমবাজারটিতে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে কাজ খুঁজছে বিশাল এক কর্মীবাহিনী। কিছু দুর্ঘটনা, বিশেষ করে রানা প্লাজা পরবর্তী শ্রমমান, কর্মপরিবেশ ও শ্রমিক অধিকারের বিষয়গুলো আলোচনার শীর্ষে তুলে এনেছে। এ ইস্যুগুলো এখন আর উপেক্ষা করার সুযোগ নেই।
২০ বিলিয়ন ডলারের এ শিল্পটির শ্রমিকদের খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে প্রতি মাসে কত টাকা প্রয়োজন, তা নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণে বিভিন্ন পক্ষের মতামত উঠে আসছে নানা আলোচনায়। ন্যূনতম মজুরির সীমা বাড়ানো হলে তৈরি পোশাক খাতের মজুরি কাঠামোয় আসন্ন পরিবর্তন ও এর প্রভাবে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা নিয়েও উদ্বেগ আছে, বিশেষ করে মালিকপক্ষের মধ্যে। তবে মনে রাখতে হবে, সমস্যাটি যতটা না অর্থনৈতিক, তার চেয়ে বেশি মানবিক ও সামাজিক।
শ্রমিকদের সাম্প্রতিক বিক্ষোভের কারণে তৈরি পোশাক খাতে ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর বিতর্ক আরো জোরালো হয়েছে। বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির বক্তারা এ বিষয়ে নানা মত দিচ্ছেন এবং এটিই স্বাভাবিক। আমার মতে, পোশাক খাতের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে এ বিতর্কের দুটো গুরুত্বপূর্ণ দিকই ভালোমতো বিশ্লেষণ করতে হবে। প্রথমটি হলো, ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিতপূর্বক শ্রমিকদের ভালোমতো বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করা। দ্বিতীয়টি হলো, দীর্ঘমেয়াদে তৈরি পোশাকশিল্পের সক্ষমতার ওপর এর প্রভাব। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ খাতেই সবচেয়ে বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হতে পারে।
এ দুটো বিষয়ের একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটির উন্নতি করা সম্ভব নয়। প্রথম বিষয়টির সামাজিক গুরুত্ব ব্যাপক পরিসরে আলোচনার দাবি রাখে। তবে শিল্পটির বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জগুলোও বিবেচনার বাইরে রাখা উচিত হবে না। নিঃসন্দেহে মজুরি বাড়লে বাংলাদেশে পোশাক তৈরির ব্যয় বেড়ে যাবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও রূঢ় বাস্তবতা হলো, বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতেই হবে খাতটিকে।
বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জগুলো চিন্তা-ভাবনায় রেখেই তৈরি পোশাক খাতের সমস্যাগুলো বিবেচনা করতে হবে। ২০১০ সালের শ্রমশক্তি জরিপে দেখা যায়, সাড়ে পাঁচ কোটি কর্মক্ষম মানুষের ৮৮ শতাংশই বিভিন্ন অনানুষ্ঠানিক ও নিম্ন উৎপাদনশীল কাজে জড়িত। এর সিংহভাগই রয়েছে কৃষি খাতে। কর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটিই হলো, এ অনানুষ্ঠানিক ও অদক্ষ শ্রমিকদের আনুষ্ঠানিক ও উৎপাদনশীল কাজের সুযোগ করে দেয়া।
দ্রুত বর্ধনশীল তৈরি পোশাক খাতের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হলো, এক-দুই দশকের মধ্যে তারা ৪০ লাখেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। তাদের বেশির ভাগই আবার নারী। বস্ত্র, অ্যাক্সেসরিজ, প্যাকেজিং, কুরিয়ার সার্ভিসের মতো অগ্র-পশ্চাৎ সংযোগ শিল্পগুলোয় কাজ করছে আরো লাখ লাখ বাংলাদেশী। মূল্য সংযোজনের প্রবণতা বাড়ছে ধীরে ধীরে। রূপান্তরের এ প্রবণতা অবশ্যই ধরে রাখতে হবে। শ্রমিকদের অধিকারের পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের বাস্তবতাও বুঝতে হবে। দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য চাই। নতুবা আবেগের বশে আমরাই হয়তো সোনার ডিম পাড়া হাঁসটিকে মেরে ফেলব।
ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের মূল উদ্দেশ্যটি হলো, এন্ট্রি লেভেলে শ্রমিকদের বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম একটি উপার্জন নিশ্চিত করা। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে এ অঙ্ক ‘ঠিক এত টাকা হতে হবে’— এভাবে মন্তব্য করা কঠিন। একটি সীমার মধ্যে থাকতে পারে এটি। অর্থনীতির তত্ত্বে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করে দেয়ার যৌক্তিকতা আছে বটে। কর্মসংস্থান ও আয়ের ওপর এর প্রভাব নিয়ে নানা ব্যবহারিক গবেষণা হচ্ছে।
তাত্ত্বিকভাবে, শ্রমের চাহিদা এবং সরবরাহের ফলে শ্রমবাজারে যে মজুরি নির্ধারণ হতো, ন্যূনতম মজুরি তার চেয়ে বেশি। ফলে নিয়োগদাতারা কম শ্রমিক নিয়োগ করবেন বলে আশা করা যায়। তাই কর্মসংস্থানের ওপরও ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের কিছু নেতিবাচক প্রভাব আছে। শ্রমিকপিছু ব্যয় বেড়ে গেলে নিয়োগদাতারা চান কম কর্মীকে দিয়ে বেশি কাজ করিয়ে তা পুষিয়ে নিতে। এমন অবস্থায় কাজের সন্ধানে থাকা প্রত্যেকের কর্মসংস্থান হবে না। উন্নয়নশীল দেশগুলোয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের অভিজ্ঞতা আসলে মিশ্র। কিছু গবেষণায় দেখা যায়, ন্যূনতম মজুরিসীমা বাড়লে শ্রমিকদের জীবনমান ও অর্থনৈতিক উন্নতি হয়। অন্যদিকে কাজ হারায় অনেকে, বিশেষ করে কম মজুরিতে কাজ করা শ্রমিকরা। তুলনামূলক কম দক্ষ কিংবা নিয়োগদাতাদের অপছন্দের কর্মীরাও এর শিকার হতে পারে। অর্থনীতিতে কোনটির প্রভাব বেশি— এর স্পষ্ট উত্তর মেলেনি এসব গবেষণায়।
যাহোক, অর্থনীতির তাত্ত্বিক আলোচনাও আমাদের সিদ্ধান্ত নেয়ায় সহায়ক হতে পারে। একটি পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক শ্রমবাজারে মালিকরা মজুরি বাড়াতে বাধ্য হলে কর্মসংস্থান কমবেই। কিন্তু তৈরি পোশাকশিল্পে মজুরি বাড়ানো হলে অর্থনীতির ওপর এর প্রভাব ইতিবাচক না নেতিবাচক হবে, তা নির্ভর করছে একাধিক বিষয়ের ওপর। এর মধ্যে শ্রমিকদের কাজ পাওয়ার প্রতিযোগিতার মাত্রা, ন্যূনতম মজুরির সঙ্গে বাজার নির্ধারিত মজুরির পার্থক্য, ন্যূনতম মজুরি কাঠামো ও অন্য শর্তাবলি, শ্রমশক্তির কত শতাংশ ন্যূনতম মজুরির আওতায় আছে উল্লেখযোগ্য।
তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, শ্রমবাজারের প্রতিযোগিতামূলক মডেলটি থেকে বাস্তবতা যত দূরে সরে আসে, অর্থনীতির ওপর ন্যূনতম মজুরির প্রভাবও তত বদলে যায়। বাস্তবে পূর্ণ প্রতিযোগিতার শ্রমবাজার মেলা ভার। আমাদের দেশে শ্রম বিক্রি করতে চায় অনেকে। কিন্তু এ শ্রমের ক্রেতা সীমিত, বিশেষ করে শিল্প খাতে। এ অবস্থায় নিয়োগদাতাদের দরকষাকষির ক্ষমতাও বেশি থাকে। বর্ধিত মজুরি যদি প্রচলিত হার থেকে কিছুটা বাড়ে এবং বাড়তি মজুরির সুফলস্বরূপ অর্জিত বর্ধিত উৎপাদনের মূল্য থেকে তা কম থাকে; তবে আশা করা যায়, কর্মসংস্থান বাড়ার একটি সুযোগ থাকবে। কিন্তু বর্তমান মজুরিব্যবস্থায় নিয়োগদাতার প্রাপ্ত সুবিধা যদি কমে যায়, তাহলে উৎপাদন ও কর্মসংস্থান দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একে ‘লুজ-লুজ’ অবস্থা বলা যেতে পারে।
সোজা বাংলায় বললে, বর্ধিত মজুরি যদি উৎপাদনশীলতা ও মুনাফা বাড়াতে সাহায্য করে, তবেই নিয়োগদাতাদের জন্য তা লাভজনক হবে। মালিকপক্ষের উত্সাহজনক মুনাফা নিশ্চিত করা না গেলে কোনো শিল্পের অগ্রগতি আশা করা কঠিন।
সুতরাং ব্যবসায়ীদের প্রথম কাজ হবে, এন্ট্রি লেভেলের শ্রমিকদের দেয়া মজুরির সঙ্গে তাদের আর্থিক অবদানের তুলনা করে একটি ভারসাম্যপূর্ণ পয়েন্ট নির্ধারণ করা, যার উপরে মজুরি দিলে লুজ-লুজ অবস্থায় পড়তে হবে না অর্থনীতিকে। শ্রমিক কল্যাণ নিশ্চিত করতে গিয়ে এ ধরনের ভুল হওয়ার আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না।
ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের সময় অর্থনীতির এ অঙ্কটি করে নেয়া উচিত সব পক্ষেরই। কারখানামালিকদেরও উচিত ন্যূনতম মজুরি ৩ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে কত করলে তাদের এবং অর্থনীতির লোকসান হবে না— এ হিসাব করা এবং তা প্রকাশ করা। একেকটি কারখানার বাস্তবতায় এ অঙ্কে ফারাক থাকতে পারে। গড়পড়তা একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা যেতে পারে পোশাক কারখানাগুলোর জন্য।
ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের আরেকটি ফল হলো ইউনিটপ্রতি উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি। মালিকপক্ষের কাছ থেকে এই একটি কারণেই প্রতিরোধ আশা করা যায়।
কোম্পানিগুলো মজুরি বাড়াতে বাধ্য হলে এবং অন্য কোনো ব্যবস্থা না নিলে বর্ধিত উৎপাদন ব্যয় তাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমাবে নিঃসন্দেহে। প্রশ্ন উঠতে পারে— এ সক্ষমতা ধরে রাখতে তারা কী কী করতে পারে?
অনেক কিছুই পারে। তাদের কর্মীরা দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে প্রতিযোগিতায় প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বাড়াতে পারে। কোম্পানিও পারে কর্মীদের ওভার টাইম ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে খরচ কমাতে (যা কাম্য নয়)। কম কর্মী দিয়ে বেশি কাজ করিয়ে নিতে পারে নতুবা কম মুনাফায় উৎপাদন ও রফতানি কার্যক্রম চালিয়ে নিতে পারে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে বাস্তবে কী ঘটতে পারে? আমার ধারণা, প্রতিটি সম্ভাবনা কিংবা আশঙ্কার একটি মিশ্রণ দেখা যেতে পারে।
পরিস্থিতির নির্মোহ বিশ্লেষণে ‘ন্যূনতম মজুরি’ তত্ত্বের বাণিজ্যিক প্রয়োগ করতে হবে। বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের সবচেয়ে বড় সমস্যাটি হবে ইউনিটপ্রতি উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির সমানুপাতে পণ্য মূল্য বাড়াতে না পারা। অভ্যন্তরীণ বাজারে খরচ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যত সহজে দাম বাড়িয়ে দেয়া যায়, তীব্র প্রতিযোগিতার আন্তর্জাতিক বাজারে বিষয়টি তত সহজ হবে না। আন্তর্জাতিক বাজারে ইউনিটপ্রতি মূল্য নির্ধারণে আমাদের উদ্যোক্তাদের প্রভাব খুব বেশি না। তারা মূলত বেঁধে দেয়া দামে পণ্যটি সরবরাহ করার কাজ করেন মাত্র।
অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে এ অবস্থার বিশ্লেষণ জরুরি। আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতেই আমাদের তৈরি পোশাকের ক্রেতারা ইউনিটপ্রতি দর বেঁধে দেয়। নিজস্ব ব্র্যান্ড না থাকায় তা প্রভাবিত করার কোনো প্রকার সক্ষমতা নেই বাংলাদেশী পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তাদের। তারা যে কাজটি সহজেই করতে পারবেন তা হলো, দর হাঁকিয়ে ক্রেতাদের বিদায় করে দেয়া। এটি কেউই কামনা করবে না নিশ্চয়ই।
দেশে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে— এ অজুহাত বাণিজ্যিক ক্রেতাদের মন গলবে না। বাস্তবতা হলো, উদ্যোক্তাদের মুনাফা কমে আসবে।
এখন প্রশ্ন হলো, মুনাফা কতটা কমলে তারা টিকে থাকতে পারবেন? মজার বিষয়, এ বিষয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য-উপাত্ত খুব বেশি পাওয়া যায় না। নিজেদের স্বার্থেই পোশাক প্রস্তুতকারকদের উচিত রাজস্ব ও মুনাফার প্রকৃত তথ্যগুলো গবেষকদের সঙ্গে শেয়ার করা।
এ শিল্পে প্রতিযোগিতায় রত দেশগুলোর ন্যূনতম মজুরির একটি তুলনামূলক চিত্র দেখলে হয়তো এ প্রশ্নের উত্তর খানিকটা পাওয়া যেতে পারে। আবার নাও পাওয়া যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম উভয়েই কেলভিন ক্লেইন ব্র্যান্ডের একই ডিজাইনের পোশাক তৈরি করে দিচ্ছে। দুটোই নিউইয়র্কের বিতানে একই দামে বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে দুটো বিষয় হতে পারে— এক, বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা বেশি মুনাফা করছেন। দুই, তারা আরো কম দামে পোশাক সরবরাহ করছেন। আবার হতে পারে, দুটোই সত্য।
বলা হয়, আমাদের পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা প্রচুর মুনাফা করে একটি বিশেষ শ্রেণীতে পরিণত হচ্ছেন, বাড়ছে তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি। কিন্তু মনে রাখতে হবে, তারা বিশ্বের তৈরি পোশাকের মাত্র ৪ শতাংশ সরবরাহ করেন। বাজারে নিজেদের শক্তি বাড়ানোর জন্য এখন পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশী ব্র্যান্ড বিশ্ববাজারে দাঁড় করাতে পারেননি তারা। উপরন্তু ক্রেতা আকর্ষণে অভ্যন্তরীণ তীব্র প্রতিযোগিতার ফলে পোশাকের দাম অনেক কমে আসে। দাম নির্ধারণের একক ক্ষমতাকেই অর্থনীতিবিদরা একচেটিয়া ক্ষমতা বলে থাকেন। টমি হিলফিসার, লিভাইস, কেলভিন ক্লেইন, ভ্যান হুজেনের মতো প্রভাবশালী ব্র্যান্ডের পোশাক চেইনগুলো, যারা বাংলাদেশ থেকে পোশাক নিচ্ছে, ঠিক এই ক্ষমতারই চর্চা করছে। লঘু চালে বিষয়টিকে ‘একচেটিয়া বাজারে প্রতিযোগিতা’ বলা যেতে পারে। প্রতিটি ব্র্যান্ড ক্রেতাদের ভিন্ন ও উন্নত মানের পণ্য জোগাচ্ছে। তারা পণ্য বহুমুখীকরণকে গুরুত্ব দেয়। এভাবেই নামী ব্র্যান্ডগুলো ক্রেতা ধরে রাখতে ভোক্তাদের পারছে। আর বাড়তি মূল্য আদায় করার মূল মন্ত্রটিই এটি। উৎপাদন ব্যয়ের সঙ্গে এর যোগাযোগ খুব বেশি— এমনটি বলা যাচ্ছে না।
এ কারণেই খুচরা বিক্রেতাদের মুনাফা অনেক বেশি হওয়ার সুযোগ আছে। অন্যদিকে তীব্র প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে সরবরাহকারীরা নিজেদের মুনাফা কমিয়ে আনছে। তাদের কাজে বহুমুখীকরণ কিংবা ভিন্ন কিছু দিয়ে বড় ব্র্যান্ডগুলোর কাছ থেকে বাড়তি মূল্য আদায়ের সুযোগ কম।
এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে যখন ওয়ালমার্টের মতো নামিদামি খুচরা বিতানগুলোয় বাংলাদেশী ব্র্যান্ডের পোশাকও জনপ্রিয় হবে। দরকষাকষির মতো হাতিয়ার পাবেন আমাদের তৈরি পোশাক উদ্যোক্তারা।
বলছি না, আমাদের উদ্যোক্তারা বিদেশী ক্রেতাদের সঙ্গে বসে দরকষাকষি করতে জানেন না। আন্তর্জাতিক চাপ কেবল বাংলাদেশের কারখানাগুলোর শ্রমমান ও মজুরি বাড়ানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। বাংলাদেশের পোশাকের ন্যায্যমূল্য দিয়ে শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করতে শীর্ষ পোশাক ব্র্যান্ডগুলোর ওপরও চাপ রয়েছে উন্নত দেশগুলোর ভোক্তা, প্রেসার গ্রুপ ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে।
সুতরাং, ন্যূনতম মজুরি বাড়লে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে এবং বিদেশী ক্রেতাদের তা বিবেচনায় নিতে বাধ্য করতে হবে। তবেই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে বাংলাদেশ।
কারো কাছেই আর অজানা নয়, উৎপাদন থেকে ভোগ পর্যন্ত পুরো চক্রটিতে সবচেয়ে বেশি মুনাফা করছেন ব্র্যান্ডমালিকরা। সুতরাং বাংলাদেশের উৎপাদকদের ব্যয় বৃদ্ধির খানিকটা ভার তারা নিতেই পারেন। দিন শেষে বাজারশক্তিই নির্ধারণ করবে— কে মূল্য নির্ধারণ করবে আর কে তা মেনে চলবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশী উদ্যোক্তারা কতটা করতে পারবেন, সেটি এখন দেখার বিষয়।