সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণের সুদহারের সর্বোচ্চ সীমা তুলে নেওয়ায় ব্যাংকগুলো
ঋণের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের কাছ থেকে কোনো ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ পর্যন্ত সুদ আদায় করছিল। ব্যবসা ও বাণিজ্য সংগঠনগুলো বলেছিল, এর ফলে শিল্প উদ্যোক্তাতাদের মধ্যে ঋণ গ্রহণে বেশ অনীহা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থনীতিবিদদের মতে, বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপটে মুদ্রানীতিকে কঠোরতর করা প্রয়োজন ছিল। মূল্যস্ফীতির হার যেভাবে বেড়ে যাচ্ছে তা নিয়ন্ত্রণে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ কমাতে হলে সুদের হার বাড়ানো ভিন্ন পথ ছিল না। বাজার ব্যবস্থায় প্রতিটি জিনিসের দাম তার চাহিদা ও সরবরাহ দ্বারাই নির্ধারিত হয়। এক্ষেত্রে সুদের হার যদি কম হয় তবে টাকা সহজলভ্য হয়, ফলে মানুষের হাতে টাকা বেশি থাকে। এতে করে পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। এর ব্যতিক্রম থাকতে পারে। তবে এটিই অর্থনীতির সাধারণ নিয়ম। আমাদের অর্থনীতিতেও টাকার প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় প্রায় বছরখানেক ধরেই মূল্যস্ফীতির হার দুই অঙ্কের ঘরে। প্রশ্ন হলো, হঠাত্ করে কেন সুদের হারটাও এত বেড়ে গেল? এর প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা দিতে হলে ৩টি কারণ দেখানো যায়— ১. এর জন্য প্রধানত দায়ী সরকার ও আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানের অতিরিক্ত ঋণচাহিদা, ২. বেশ কিছুদিন ধরে সুদের হারকে সরকারি বা অন্যভাবে বেঁধে রাখা এবং ৩. সুদের হার প্রয়োজনের তুলনায় কম হওয়ায় ব্যক্তি ও ব্যবসায়িক খাতে ঋণের অতিরিক্ত চাহিদা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়া।
ঋণের সুদের হার হঠাত্ বেড়ে যাওয়ার জন্য বাজারব্যবস্থাকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। অথচ প্রকৃতপক্ষে বাজেট বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সরকার যে অতিরিক্ত ঋণ চাহিদা সৃষ্টি করেছে, তা মেটাতে গিয়ে বর্তমানে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব। বাজারে যে অতিরিক্ত ঋণ চাহিদা তৈরি হয়েছে, তার অন্যতম উত্স হচ্ছে সরকার ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলো। সরকার ও এসব সরকারি প্রতিষ্ঠানের চাহিদা মেটাতে গিয়ে সুদের হারের হঠাত্ উল্লম্ফন। এক্ষেত্রে সরকারি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় আনা জরুরি, যাতে চাহিদা ও জোগানের মাধ্যমে সুদের হার স্বাভাবিকভাবে নির্ধারিত হয়। এ পরিস্থিতিকে স্থিতিশীল করতে সুদের হারের ওপর ‘সিলিং’ নির্ধারণ করাটা মোটেই যৌক্তিক পদ্ধতি হতে পারে না। সরকারের ব্যবস্থাপনা ও ব্যয় সংকোচনের মাধ্যমেই এটিকে সহনীয় পর্যায়ে আনতে হবে; যেটি করা হয়নি। এর বদলে আমরা দেখলাম, ঋণের সুদহারের ওপর সিলিং পুনঃপ্রবর্তন করা হলো। এটি দিয়ে বাজারে বিদ্যমান অর্থের চাহিদা ঘিরে যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা কমানো যাবে না। এতে সরকার বরং আরও উত্সাহিত হবে ঋণ গ্রহণে।
সুদের হারকে কৃত্রিম উপায়ে বেঁধে রাখার ফলে সিলিং তুলে নেওয়ার পর হারের বৃদ্ধিটা বেশি হবে সেটাই স্বাভাবিক। বাজার ব্যবস্থায় কোনো কিছুকে বেঁধে দেওয়ার পরিণাম ভালো হয় বলে জানা নেই। বাজারে যদি অতিরিক্ত চাহিদা থাকে এবং সেই সঙ্গে সীমা বেঁধে দেওয়া হয়, তা লাফ দেবেই। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে পানির বাঁধকে তুলনা করতে পারি। উভয় পাশে সামঞ্জস্য না রেখে এক পাশে পানির উচ্চতা বাড়তে থাকলে হঠাত্ বাঁধ ভেঙে গেলে বা তা খুলে দিলে সবকিছু তলিয়ে যাবে, ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি হবে। এ ক্ষেত্রে অর্থনীতিটাও অনেকটাই এমন। সুদের হার নির্ধারণ করে সংকট বাড়িয়ে এবং পরে বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে অর্থনীতিকে তা বিপর্যস্ত করতে বাধ্য। বাজার ব্যবস্থাপনায় সবকিছুই ওঠানামা করে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে। কৃত্রিম হস্তক্ষেপ শুধু সমস্যাই তৈরি করে এ ক্ষেত্রে।
এটা গেল একটা দিক। অন্যদিকে সুদের হার নির্ধারণের দায়িত্ব বা আইনগত অধিকার রয়েছে কার? ঋণ নীতিমালা প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের এখতিয়ারভুক্ত। এখানে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী পরিচালিত সংস্থা হস্তক্ষেপ করতে পারে না। যদি করে, তা হবে আইনবহির্ভূত। এটিকে সিন্ডিকেশন হিসেবে অভিহিত করা যেতে পারে। বাংলাদেশে কোথাও যদি সিন্ডিকেশন থেকে থাকে, ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনে থাকতে পারে সেটি। কারণ তারা খুবই সংগঠিত। তারা একসঙ্গে কাজ করে এবং একই সঙ্গে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে ফেলে। তাদের কার্যকলাপে এটি স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান। মনোপলিস্টিক কার্যক্রমের নির্ভুল উদাহরণ হচ্ছে এ ধরনের সংগঠনের সুদসংক্রান্ত কার্যক্রম। তাদের ক্ষমতা আছে এটা বাস্তবায়নের। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এ সংগঠন নির্দেশনা জারির মাধ্যমে দেশের প্রায় সবক’টি ব্যাংককে সিদ্ধাস্ত বাস্তবায়নে বাধ্য করতে পারে। এ ক্ষমতা তারা নিজের স্বার্থে ব্যবহার করতে পারে এবং করছে বলেই ধারণা। নিজের স্বার্থেই তারা সেপ্রড ঘোষণা, আমানতের সুদের হার কমিয়ে এবং ঋণের সুদের হার বাড়িয়ে ফেলতে পারে। এটি হচ্ছেও। সুদের হার নির্ধারণ সংক্রান্ত নীতি বাস্তবায়ন করতে হলে সেটা সব সময় বাংলাদেশ ব্যাংকেরই করা উচিত। অন্য কোনো সংগঠনকে এভাবে ব্যবহার বা তাদের এ ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করতে দেওয়া আইনত সিদ্ধ নয়। এটি মনে রেখে এমন কার্যকলাপ অতিসত্বর বন্ধ করা উচিত। এটি করতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারকেই।
মুদ্রানীতি বাস্তবায়নের একটা অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে সুদের হার। এর মাধ্যমে অর্থের প্রবাহকে বাড়ানো বা কমানো হয়। অর্থনীতিতে যে পরিমাণ অর্থ রাখা প্রয়োজন, সে পরিমাণ অর্থই সরবরাহ করা উচিত। এটার একটা উপাদান হচ্ছে ঋণের পরিমাণ সীমিত রাখা। গেল বছর ব্যক্তি খাতে মোট ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি ছিল ২৬-২৭ শতাংশ। গত কয়েক বছর গড়ে এমন উচ্চ হারে ঋণের প্রবৃদ্ধি বজায় ছিল। তারপরও যদি বেসরকারি খাত অভিযোগ করে যে তারা যথাযথভাবে ঋণ পায়নি, তবে তা হবে দুঃখজনক। এ ক্ষেত্রে যত ঋণই দেওয়া হোক না কেন, তারা হয়তো আরও চাইবেন। এটা ঘটতে দেওয়া অর্থনীতির জন্য ভালো নয়। ঋণের প্রবৃদ্ধি আমাদের দেশের অর্থনীতির পরিপ্রেক্ষিতে ১৭-১৮ শতাংশের বেশি হওয়ার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। জিডিপি প্রবৃদ্ধি যদি ৭ শতাংশও হয় এবং মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা বজায় রাখতে হয়, তাহলে ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৬-১৭ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়। মূল্যস্ফীতি কমাতে হলে ঋণের প্রবৃদ্ধি কিছু সময়ের জন্য আরও কমাতে হতে পারে। তাদের লক্ষ্য ঋণের প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা। সুদের হার যদি ২০ শতাংশও হয়ে যায় এবং ঋণের প্রবৃদ্ধি ২৫ শতাংশের বেশি হয়, তাহলে বুঝতে হবে বাজারে অর্থের অতিরিক্ত চাহিদা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে সুদের হার আরও বাড়তে দেওয়াটাই সমীচীন। কারণ ঋণের সরবরাহকে পরিমিত এবং সহনশীল পর্যায়ে রাখাই হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব। লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও যদি বেশি ঋণের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়, তবে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে প্রমাণ করতে হবে কেন ও কোথায় এত ঋণের প্রয়োজন। বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্দেশ্য হলো ঋণ বৃদ্ধিকে অর্থনীতির জন্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা।
যারা বর্তমান উচ্চহার নিয়ে সরকারি মহলে চাপ সৃষ্টি করছেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলবো, আপনাদের যদি মুনাফাই না থাকে, তাহলে ব্যক্তি খাতের ঋণের পরিমাণ এখনও বাংলাদেশ ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রার উপরে কেন? এটাই কি সত্য নয় যে, মুনাফার হার সুদের হারের চেয়ে এখনও বেশি বলেই তারা উচ্চসুদের হার সত্ত্বেও ঋণগ্রহণ করছেন? এটা নিশ্চিত করেই বলা সম্ভব যে সামগ্রিকভাবে ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তারা কোনো সামাজিক ও দাতব্য কাজের জন্য ঋণ নিচ্ছেন না, তারা ঋণ নিচ্ছেন ব্যবসায়িক লাভের কারণেই। একটু অন্যভাবেও বিষয়টিকে দেখতে চাই। বিনিয়োগকারীরা আমানত খাটিয়ে সামগ্রিকভাবে এক ধরনের কার্যক্রমের মাধ্যমে জাতীয় উত্পাদন বৃদ্ধি করেন। আমানতকারীরা যদি কিছুই না পায় তবে উত্পাদনের লভ্যাংশ শুধু ব্যাংক এবং ব্যবসায়ী/উদ্যোক্তারা পাবেন। এটা কি অর্থনৈতিক, নৈতিক ও সামাজিকভাবে কাম্য হতে পারে? বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত হবে, যে পরিমাণ ঋণের প্রবৃদ্ধি অর্থনীতির জন্য ভালো সেটা অর্জনের প্রচেষ্টা নেওয়া। এটি করতে গিয়ে সুদের হার যেখানে যাওয়ার প্রয়োজন, সেখানেই যেতে দিতে হবে। বাজার স্বাভাবিক হলে সুদের হারও স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
সমপ্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে এতে মূল্যস্ফীতি নামিয়ে আনার এক ধরনের প্রত্যয় লক্ষ্য করা যায়। গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতার বিবেচনায় একে ব্যতিক্রমধর্মী বলা চলে। মূল্যস্ফীতিকে একটি বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবার। এটিকে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার ক্ষেত্রে মুদ্রানীতিকে একটি ঘোষণাপত্র হিসেবেই দেখছেন সবাই। এ পরিবর্তনকে আমরা স্বাগত জানাই। আগে মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতিকে গুরুত্ব দেওয়া হলেও এমন সরাসরি স্বীকৃতি ছিল না সেগুলোয়। আগে অনেকটা এমন ভিত্তির ওপর নির্ভর করে মুদ্রানীতি করা হতো, যেন মূল্যস্ফীতির সঙ্গে অভ্যন্তরীণ মুদ্রা সরবরাহের তেমন সম্পর্কই নেই। পণ্যের দাম বাড়ছে শুধু আন্তর্জাতিক কারণে। কেমন যেন একটা অস্পষ্টতা দেখা যেত আগের মুদ্রানীতিতে। সমস্যাকে দৃঢ়ভাবে মোকাবেলা বা যেভাবে উপলব্ধি করা প্রয়োজন, সেটার অভাব ছিল। এ পরিপ্রেক্ষিতে নতুন ঘোষিত মুদ্রানীতিতে এক ধরনের স্পষ্টতা রয়েছে। এটাও সত্য, এবারের মুদ্রানীতিটা এমন সময়ে ঘোষণা করা হলো, যখন দেশের অর্থনীতি এক ধরনের টানাপড়েনের মধ্যে রয়েছে। সামগ্রিক অর্থনৈতিক ভারসাম্যহীনতা প্রকট হয়ে উঠছিল বলেই দৃঢ়তার প্রয়োজন ছিল এ ক্ষেত্রে।
বাংলাদেশ ব্যাংক যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করলো এবং যে দৃঢ়তা দেখালো সেটা বাস্তবায়ন করতে অনেক প্রতিবন্ধকতা থাকবে। প্রথম চ্যালেঞ্জ, বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহকে নামিয়ে আনা। এটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক মোটামুটি সফল হচ্ছে বলা যায়। ব্যক্তি বা বেসরকারি খাতে গত কয়েক মাসে ঋণের চাহিদা বেশ কমে এসেছে বিভিন্ন কারণে। এর একটা বড় কারণ, সুদের হার বৃদ্ধি। আরেকটি কারণ, ডলারের দর বৃদ্ধি ও এর স্বল্পতা। অনেক সময় দেখা যাচ্ছে, ঋণপত্র (এলসি) খোলার সময়ে টাকা থাকলেও ডলারস্বল্পতার কারণে তা খরচ করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। এ কারণে বেসরকারি ঋণের চাহিদা সংকুচিত হয়ে আসছে। ডলার না পাওয়ায় উদ্যোক্তারা ব্যয় করতে পারছেন না।
দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে— এবারের মুদ্রানীতির উদ্দেশ্য অর্জনে রাজস্বনীতির সঙ্গে মুদ্রানীতির সমন্বয়। মুদ্রানীতিতে প্রাক্কলনকৃত সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ডিসেম্বরের ৬২ শতাংশ থেকে জুনের মধ্যে ৩১ শতাংশে নামিয়ে আনা, বিশেষত অর্থবছরের অবশিষ্ট সময়ে অবশ্যই কষ্টকর। এর মধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এ লক্ষ্যমাত্রা। বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারি ঋণগ্রহণের মাত্রা কমিয়ে আনার পরামর্শ দিলেও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিশ্রুতির কথা আমরা জানতে পারিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া সীমার মধ্যে সরকার ঋণ সীমাবদ্ধ রাখতে সক্ষম হবে বা প্রচেষ্টা নেবে, এমন লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। এ লক্ষ্য অর্জন করতে গেলে যে ধরনের প্রচেষ্টা নিতে হবে বা নেওয়া হয়েছে, তার যথার্থতা নিয়ে কোনো বিশ্লেষণও সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকও উদ্যোগ নেয়নি এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আস্থা সৃষ্টির ব্যাপারে। এটি নতুন মুদ্রানীতি বাস্তবায়নে এক ধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করছে। রাজস্বনীতি আরও সুস্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন ছিল। এখানে একটা পর্যালোচনা থাকা উচিত ছিল কীভাবে সরকার ঋণ কমিয়ে আনবে বা মুদ্রানীতি বাস্তবায়নে সহায়তা করবে। এটিকে বলা হয় পলিসি কো-অর্ডিনেশন। বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষণা করল, অথচ সরকারের পক্ষ থেকে এর সমর্থনে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না। থাকলে তা ঘোষণার মাধ্যমে দেখানোটাই ছিল কাম্য। এতে বাজার আশ্বস্ত হতো সরকার কীভাবে নীতি বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে অর্থনীতিবিদরা বিশ্লেষণ করতে পারতেন সরকারের পদক্ষেপগুলো পর্যাপ্ত কি না। এখন এসবের কোনোটিই করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে সরকারি ব্যয় ও ঋণের রাশ টেনে ধরার ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এটাকে অনেকটা ‘ব্ল্যাকহোলের’ সঙ্গে তুলনা করা যায়। চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের মতো চলতে থাকলে সরকারি ঋণ যে কেবল বেসরকারি ঋণকে গ্রাস করতে পারে তা নয়, সামগ্রিক অর্থনীতি ও বেসরকারি খাতে বড় রকমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এটি।
লেখক : অর্থনীতিবিদ ও নির্বাহী পরিচালক, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)