আগামী অর্থবছরের (২০১৩-১৪) বাজেট ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আবারো আলোচনায় এসেছে দেশের
শেয়ারবাজার। এর সঙ্গে সম্পৃক্তদের পক্ষ থেকে নানা দাবিদাওয়া আসছে প্রতিনিয়ত। অধিকাংশের মূল কথা হলো, বাজার সচল করতে হলে প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। এ সত্যতা অস্বীকার করা যাবে না। তবে প্রশ্ন হলো— সহায়তার নামে অবাধে অর্থ জোগানোর দাবি কতটা যৌক্তিক? দেশের শেয়ারবাজারের বর্তমান অবস্থাসহ কিছু বিষয়ে আলোকপাতের উদ্দেশ্যে এবারের নিবন্ধ।
দেশের শেয়ারবাজার চলছে নিজস্ব গতিতে। এমন গতিতেই চলতে দেয়া উচিত বাজারকে। শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্ট আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এবং করব্যবস্থার কিছু অসঙ্গতি (যদি থাকে), দূর করা ছাড়া সরকারের বেশি কিছু করার প্রয়োজন রয়েছে বলেও মনে করি না। বাজারকে দ্রুত চাঙ্গা করতে গিয়ে অতিরিক্ত কিছু করতে যাওয়া অর্থাত্ কৃত্রিম পদক্ষেপ গ্রহণ সঠিক হবে না এ মুহূর্তে। কিছুদিন আগে এক প্রবন্ধে উল্লেখ করেছিলাম, দরপতনের পরবর্তীকালে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার মোটামুটি একটি পর্যায়ে এসেছে। অর্থাত্ সেখানে এক ধরনের স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। বেশ কিছুদিন ধরেই লক্ষ করা যাচ্ছে এ প্রবণতা। যদিও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে গত মাসে কিছুটা কমে এসেছিল শেয়ারবাজারের মূল্যসূচক, লেনদেন ও এর গতি। এটি কিন্তু মার্কেট ফান্ডামেন্টালের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল না। রাজনৈতিক কারণে আমাদের অর্থনীতি বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিকট ভবিষ্যতেও এর উন্নতি হবে বলে মনে হচ্ছে না। অস্থির রাজনীতির একটি প্রতিফলন শেয়ারবাজার ও অর্থনীতিতে পড়েছে। তবে এর প্রভাব সীমিত বলা চলে। শেয়ারবাজারের সূচক সর্বনিম্ন ৩৫০০তে চলে এসেছিল তখন, সেটি হয়তো সর্বোচ্চ ৪৫০০তে থাকতে পারত। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে তা হয়েছিল। তবে এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠা গেলে বাজারসূচক অন্তত ৭০০ থেকে ১০০০ পয়েন্ট বাড়বে বলে বিশ্বাস করি। এটা শেয়ারবাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেরই ধারণা। বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে বাজেট তেমন কিছু করতে পারবে বলে মনে হয় না। রাজনৈতিক কারণে সৃষ্ট চাপ রাজনৈতিকভাবেই সমাধান করতে হবে। একে বাজেট দিয়ে সমাধান করা সম্ভব নয়; উচিতও নয়।
রাজনৈতিক কুয়াশা ভেদ করে দেশের শেয়ারবাজারকে আপেক্ষিকভাবে তুলনা করে দেখতে পারি আমরা। চীনের সাংহাই শেয়ারবাজারের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে— বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের মতো তাদের অবস্থাও প্রায় একই রকমের। তবে তাদের শেয়ারবাজারের পতন ২০০৭ সালে আরো দ্রুত হয়েছে। কুয়েতের শেয়ারবাজারের সঙ্গে তুলনা করলেও লক্ষ করা যাবে একই অবস্থা। সেখানেও শেয়ারবাজারের পতন দ্রুত হয়েছে। তবে সব বাজারই এখন স্থিতিশীল পর্যায়ে এসেছে। প্রশ্ন আসতে পারে, বাজার স্থিতিশীল হতে কেন এত সময় নিল বা পতনটা কেন দীর্ঘস্থায়ী হলো বাংলাদেশে? তথ্য-উপাত্ত বলছে, কুয়েত ও সাংহাই শেয়ারবাজারের পতন শেষ হয়েছে ১২০-১২৫ দিনের মধ্যে। অর্থাত্ চার মাসের মধ্যে বাজার সংশোধনের কাজটি শেষ হয়ে গেছে তাদের। আমাদের ক্ষেত্রে লেগেছে ২৭৫ দিন। অর্থাত্ আমরা সময় নিলাম প্রায় নয় মাস। এটি ব্যয়বহুল একটি প্রক্রিয়াও ছিল বটে। কারণ সরকার পতনরোধে অনেক অর্থ এ বাজারে ঢেলেছে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও ব্যাংকের মাধ্যমে। বলা যায়, আমরা অর্থ দিয়ে বেদনা কিনেছি। শেয়ারবাজার চাঙ্গা রাখতে সরকার যে অর্থ ব্যয় করেছে, সেটি আর ফেরত আসবে না। আইসিবি, সোনালী ব্যাংকসহ যাদের মাধ্যমে অর্থ খরচ করা হয়েছে, সেটিও আর ফেরত আসবে না। বিনিময়ে আমরা কী পেয়েছি? আমাদের অ্যাডজাস্টমেন্টের বেদনা দীর্ঘায়িত হয়েছে এতে।
তবে সংকটের পর্যায় আমাদের শেষ হয়ে এসেছে। অন্যান্য শেয়ারবাজার যে ধারায় চলছে, আমাদের অবস্থা তার বাইরে নয়; বরং ক্ষেত্রবিশেষে ভালো। পার্শ্ববর্তী কিছু দেশের শেয়ারবাজার ধরে আলোচনা করলেও আমাদের অবস্থা স্পষ্ট হয়ে উঠবে। আমাদের বাজার সংশোধনের প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গেছে। প্রশ্ন হলো, এর থেকে আমরা কি খুব দ্রুত উপরে উঠতে পারব? আমি বলব, এমন আশা করা অন্তত এ মুহূর্তে ঠিক নয়। বাজার কনসোলিডেশন আরো কিছুদিন চলতে থাকবে। আমরা বর্তমানে যেখানে আছি, সেখানে বাজার সংশোধন-পরবর্তী ৪৭৬ দিন অতিবাহিত হয়েছে এই মধ্যে। সাংহাই মার্কেটের ১ হাজার ৩৭৬ দিন অতিবাহিত হয়েছে। কুয়েতের শেয়ারবাজারেও একই অবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে। অর্থাত্ প্রতিটি শেয়ারবাজার স্বাভাবিক অবস্থায় আসতে বেশ কয়েক বছর সময় নিয়েছে। এ ধরনের পর্যায়ে আগামী বেশ কিছুদিন আমাদের থাকতে হবে। কাজেই অদূর ভবিষ্যতে শেয়ারবাজারে বড় ধরনের উল্লম্ফন আশা করাটা ঠিক হবে না।
কেন ঠিক হবে না, সেটিও এক বড় প্রশ্ন। সব বাজারে বড় একটি ওভার হ্যাং থাকে। অর্থাত্ অনেকেই শেয়ার বিক্রির জন্য অপেক্ষা করছে আমাদের দেশে। তাদের মনোভাব এমন যে, একটু বেশি দাম পেলেই শেয়ার বিক্রি করে দেবে। কারণ তাদের ধারণক্ষমতা কমে আসছে। এটাই স্বাভাবিক। এ কারণে বাজারের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরতে কিছুটা সময় নিচ্ছে। বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে অব্যবস্থাপনার কারণে আরো সমস্যা তৈরি হয়েছে। সরকার মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে বলেছে, তাদের হাতে থাকা শেয়ার এখনই লিকুইড করতে পারবে না। একই কথা বলা হয়েছে ব্রোকারেজ হাউসগুলোকেও। বাস্তবতা হলো, ব্রোকারেজ হাউস ও বাণিজ্যিক বা মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো হাজার হাজার কোটি টাকার শেয়ার নিয়ে বসে আছে, যেগুলো তারা পারলে আজই ঘাড় থেকে নামিয়ে দেয়। কাজেই শেয়ারবাজারের মূল্যসূচক বাড়লে তারা এগুলো ধীরে ধীরে ছাড়বে বৈকি। তাদেরও অর্থ প্রয়োজন। যেমন— কিছুদিন আগে একটি সরকারি ব্যাংক তাদের হাতে থাকা ৭০-৮০ কোটি টাকার মতো শেয়ার ছেড়ে দিয়েছে। এভাবে অন্যরাও শেয়ার ছেড়ে দিতে চাইবে। এটি সময়ের ব্যাপার মাত্র। যত দিন পর্যন্ত ওভার হ্যাংটা না কমবে, তত দিন বাজার স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারবে না। মনে রাখতে হবে, ১০ কেজি বহন ক্ষমতাসম্পন্ন একজনকে ১০০ কেজি বোঝা দিয়ে দৌড়াতে বলা হলে, সে তা করতে পারবে না। বড়জোর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। তাই বলছি, ধীরে ধীরে সময়ের সঙ্গে বিক্রির মাধ্যমে বোঝাটাকে হালকা করতে পারলে বাজারে গতি আসাটা সহজ হবে। ওভার হ্যাং যত দিন থাকবে, তত দিন মার্কেট তার পূর্ণ গতিশীলতা ফিরে পাবে না।
আমরা অনেক সময় শেয়ারবাজার নিয়ে উচ্চাশা পোষণ করি। এখানে ‘আশা’ করাটা সঙ্গত কিনা, তা বিবেচনা করা দরকার। বলা হচ্ছে, বাজারের তারল্য কম। তারল্য আসলেই কম কিনা, তা বিবেচনা করা হয় বাজারের আকার দেখে অর্থাত্ তার ক্যাপিটালাইজেশনের ওপর। তারল্য এক দিন কম হলেও আরেক দিন তা বেশি হতে পারে। সেজন্য একে বিচার করতে হবে গড় তারল্যের অবস্থা দিয়ে। বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি পরিমাপ করে আমরা দেখতে পাই, বাজারে গড় তারল্য ঠিকই রয়েছে।
তারল্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। শেয়ারবাজার যে পর্যায়েই থাকুক না কেন, পর্যাপ্ত তারল্য থাকলে সেটি সচল থাকবে বৈকি। যে বাজারে তারল্য থাকবে না, সেটি অচল। প্রশ্ন উঠতে পারে— সেটা কত? এটিও নির্ভর করবে বাজারের আকারের ওপর। যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজার এবং আমাদেরটির আকার এক নয়। হতেও পারবে না। কাজেই বাজারের আকারের তুলনায় আমাদের তারল্য প্রবাহ পরিমাপ করতে হবে।
২০১২ সালকে গড় হিসেবে ধরলে ঢাকা শেয়ারবাজারের টার্নওভার মার্কেট ক্যাপের তুলনায় ৪২ শতাংশ ছিল। অর্থাত্ ৪২ শতাংশ মূল্যের শেয়ার হাতবদল হয়েছে এখানে। প্রশ্ন উঠতে পারে, এটি বেশি না কম? অন্যান্য শেয়ারবাজারের দিকে তাকালে দেখা যাবে— হংকংয়ে এটি ৩৯, সিঙ্গাপুরে ৩৩, মালয়েশিয়ায় ২৭, করাচিতে ২৬, থাইল্যান্ডে ৬০। এসব উদারহণ থেকে বলতেই হবে, তুলনামূলকভাবে বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে ঢাকার শেয়ারবাজারের তারল্য প্রবাহ। বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের অতীতের সঙ্গে বর্তমানকে তুলনা করলে দেখা যাবে (২০০৭ থেকে ২০১২ পর্যন্ত সময়কে বাদ দিয়ে) বাজেটে তারল্য প্রবাহের তেমন একটা হেরফের হয়নি। বর্তমান পর্যায়ে আমাদের বাজারের তারল্য ঐতিহাসিক তারল্যের আপেক্ষিক লেভেলের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
অনেকে অভিযোগ করেন, বাজারে শেয়ারের দাম কম। দাম একটি আপেক্ষিক বিষয়। পণ্য কিনে আমি তার বিনিময়ে কী উপযোগ পাব— এর ওপর নির্ভর করে তার মূল্য? একটা বাড়ির দাম কীভাবে নির্ধারিত হয়? বাড়িভাড়া দিলে অর্থ পাওয়া যাবে অথবা নিজে থাকলে সাশ্রয় হবে— তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দাম নির্ধারিত হয় সুযোগ ব্যয় (Opportunity cost) হিসেবে। একইভাবে বন্ডের কথাও বলা যায়। বন্ড নিছক একটি কাগজ। কিন্তু তাতে যদি লেখা থাকে ১০ কোটি টাকা এবং ১০ শতাংশ ইন্টারেস্ট, তাহলে এর মূল্য অনেক বেশি। আবার বন্ড হোল্ডার যদি সুদ বা আসল পরিশোধ না করে, তাহলে এর মূল্য শূন্য। বাজারে কোনো কোম্পানির শেয়ারের মূল্য এমন একটি অন্তর্নিহিত মূল্য, যা পরিমাপ করা হয় কোম্পানির অর্থিক (financial) পারফরম্যান্স দিয়ে। এক কোম্পানির পারফরম্যান্স দিয়ে কিন্তু আরেকটিকে বিবেচনা করা হয় না। এক্ষেত্রে দেখতে হবে, কোনো কোম্পানির শেয়ার থেকে যে আয় হচ্ছে তা বাজারে ওই কোম্পানির শেয়ারমূল্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা, যা অনেকটা অনুমান করা যায় মূল্য বা আয়ের (Price/Earnings ratio) অনুপাতের মাধ্যমে। গেল বছর ঢাকা শেয়ারবাজারে গড় মূল্য বা আয়ের অনুপাত ছিল ১২.১। আমাদের প্রতিবেশী সাংহাইয়ের শেয়ারবাজারে এটি ছিল ১২.৩, সিঙ্গাপুরে ছিল ১২.০। এ দৃষ্টিকোণ থেকে কিন্তু আমাদের শেয়ারের গড় মূল্য সন্তোষজনক, সস্তা নয়।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের দৈনিক লেনদেনের দিকে তাকালেও দেখা যাবে— এক ধরনের স্থিরতা এসেছে সেখানে। বিদেশী বিনিয়োগও বাড়ছে এতে। পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে দেখা যায়, ২০১০ সালের এপ্রিলের মধ্যেই ঢাকা শেয়ারবাজার থেকে বিদেশীরা তাদের বিনিয়োগ বলতে গেলে পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নিয়েছিল শেয়ারের অতি মূল্যায়নের কারণে। সম্প্রতি তারা আবারো ফিরে আসছে। বিদেশীদের বিনিয়োগের পরিমাণ এখন স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে এসেছে। এ থেকে বোঝা যায়, বাজারে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। নইলে তারা প্রায় ৪০০-৫০০ মিলিয়ন ডলার নতুনভাবে বিনিয়োগ করবে কেন। তথ্য-উপাত্ত থেকেই এটি স্পষ্ট। বাজার সংশোধনের পর পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীরা ফিরে আসতে শুরু করেছে। প্রায় প্রতি মাসেই বিনিয়োগ বাড়ছে। আইপিওতেও আশানুরূপ সাড়া মিলছে।
এবার আসা যাক শেয়ারবাজারের ধস-পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ প্রসঙ্গে। শেয়ারবাজারে দুর্বল তদারকিও এটি ধসের অন্যতম কারণ। বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় ও সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের মধ্যে সমন্বয়হীনতাও এক্ষেত্রে কম দায়ী নয়। ধস-পরবর্তী সময়ে বাজারের স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় আইন সংশোধনসহ নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাবও পড়েছে বাজারের ওপর। ডিমিউচুয়ালাইজেশনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে; আইনও প্রণয়ন করা হয়েছে। কার্যক্রমের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তবে স্বাধীন ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়নি এখনো। পাশাপাশি শেয়ারবাজার-সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে একটি বিশেষ আদালতও গঠন করা প্রয়োজন।
সামগ্রিকভাবে বড় ধরনের সংশোধনের পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সঠিক পথেই রয়েছে। সমসাময়িক বাজারগুলোর মধ্যে আমাদেরটির অবস্থা অনেকাংশে স্থিতিশীল বলা যায়। সূচক, মূলধন ও লেনদেনের পরিমাণ বিবেচনায় একে সুস্থ বাজার বলা যেতে পারে। এ মুহূর্তে কৃত্রিমভাবে বাজারকে দ্রুত চাঙ্গা করার পদক্ষেপ হিতে বিপরীত হতে পারে। এ-সংক্রান্ত মন্দ অভিজ্ঞতা কিন্তু নিকট অতীতেই আমাদের রয়েছে। শেয়ারবাজারে বিদেশী বিনিয়োগ বৃদ্ধি ইতিবাচক ইঙ্গিত বহন করে। শেয়ারবাজারের স্বাভাবিক গতি অব্যাহত রাখতে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এক্ষেত্রে আইপিওর পরিমাণ বাড়ানোসহ শেয়ারবাজারে নতুন নতুন কোম্পানিকে যুক্ত করার পদক্ষেপ নিতে হবে। এ মুহূর্তে শেয়ারবাজার চাঙ্গা করার চেয়ে এর সংস্কারের দিকেই অধিক নজর দিতে হবে। পরিপূর্ণ ডিমিউচুয়ালাইজেশন প্রক্রিয়াটি দ্রুত সম্পন্ন করা প্রয়োজন। কোম্পানির নিরীক্ষাব্যবস্থা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নতকরণে পদক্ষেপ নিতে হবে। কোম্পানির অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ, নিরীক্ষা, নীতি প্রভৃতি তদারকিতে অডিট কমিটি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। করপোরেট বন্ড মার্কেট তৈরির দিকেও নজর দিতে হবে। এখানে কালো টাকার বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে। যদি কোনো ক্ষেত্রে একই আয়ের ওপর একাধিকবার করারোপ করা হয়ে থাকে, তবে তা রোধ করা প্রয়োজন। দ্বৈত কর ব্যবস্থা কখনই গ্রহণযোগ্য নয়। আশা করা যায়, শেয়ারবাজারের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে সুষ্ঠুভাবে বিকাশ লাভ করবে এটি। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে ধৈর্য ও ইতিবাচক মনোভাবের পরিচয় দিতে হবে এবং সংস্কার কার্যক্রমকে জোরদার করতে হবে।