রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণে বাজেট গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
এতে সরকারের আয়-ব্যয়ের হিসাবই সন্নিবেশিত থাকে না, মধ্যবর্তী যেসব লক্ষ্য রয়েছে— সেসব অর্জনের কৌশলও এটি। এ ক্ষেত্রে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার কথা বলা যায়। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাটি একটি মধ্যমেয়াদি উন্নয়ন কৌশল। এ পরিকল্পনা প্রণীত হয়েছে কতগুলো লক্ষ্যকে সামনে রেখে। ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর স্বল্পমেয়াদি একটি কৌশল হলো বাজেট। বিদ্যমান আর্থিক চ্যালেঞ্জগুলোকে কীভাবে মোকাবেলা করবে সরকার, সেটির দিকনির্দেশনাও বাজেটে থাকবে। অভ্যন্তরীণ ও বিশ্ব অর্থনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন অর্থবছরে যে নীতি-পরিকল্পনা নেয়া হবে, তার দিকনির্দেশনাও ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটে থাকবে বলে আশা করা যায়। বাজেট হচ্ছে ‘ম্যাক্রো ফিসক্যাল স্টেটমেন্ট’। আমাদের মতো দেশে আয়, ব্যয় ও ঘাটতির সমন্বয়ে তৈরি হয় এটি। বাজেটে যে নীতি নেয়া হবে, স্বভাবতই তার একটা প্রভাব পড়বে মুদ্রানীতিতে। বাজেট ঘাটতি কীভাবে মেটানো হবে; তার ওপর নির্ভর করবে মূল্যস্ফীতি, মুদ্রার বিনিময় হারসহ অন্য অনেক কিছু।
বাজেটের ইন্টারলিংকেজগুলো বেশ গভীর। প্রথমত, বাজেটের অর্ধেকটাই রাজস্বনীতি সম্পর্কিত। অথচ এটি থেকে যায় দৃষ্টির আড়ালে, অনেকেই উল্লেখও করেন না বিষয়টি। বেসরকারি খাতের প্রণোদনা বজায় রেখে কীভাবে রাজস্ব আরও বাড়ানো যায়, সেটিও দেখা হয় এখানে। উল্লেখযোগ্য হলো, শুল্কনীতিও এর মধ্যে এসে যায়। শুল্কের কিছু পরিবর্তন হয় বাজেটে। বাজেট পাশের আগে কেউ জানে না শুল্কনীতি কী হতে যাচ্ছে। বাণিজ্যনীতির একটি বড় অংশ আবার শুল্কনীতি। বাণিজ্যনীতির অন্য যে উপাদান রয়েছে যেমন কোয়ানটেটিভ রেসট্রিকশন, নন-ট্যারিফ মেজারস— এগুলো আজকাল ততটা প্রভাবক হিসেবে কাজ করে না। বাণিজ্য সম্পর্কিত যে নিয়ন্ত্রণ আগে ছিল আমদানির ওপর, সেগুলো এখন আর নেই। এখন ডব্লিউটিও নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কতগুলো নন-ট্যারিফ মেজারস যেমন টিবিটি (টেকনিক্যাল ব্যারিয়ার টু ট্রেড), এসপিএস আরোপ করা হয়। এগুলো স্বাস্থ্য, পরিবেশ, জাতীয় নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে ব্যবহার করা হয়। এগুলোকে বাণিজ্যনীতি বলা হয় না, বলা হয় রেগুলেশন। বাণিজ্যনীতির অন্য অংশে আঞ্চলিক সম্পর্কও আলোচনা করা হয়। শুল্কনীতি বাণিজ্যনীতির একটি বড় প্রভাবক এবং সেটি বাজেটের মাধ্যমেই পেশ করা হয়। এসব দিক বিবেচনা করলে স্পষ্টই বোঝা যাবে যে, বাজেটের সঙ্গে বেশকিছু নীতির ইন্টারলিংকেজ রয়েছে, যার প্রভাব অর্থনীতির ওপর বিদ্যমান। বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্যের মুনাফা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচনসহ প্রায় সবক্ষেত্রে এর প্রভাব বিদ্যমান। ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় প্রবৃদ্ধি বাড়ানোয়ই শুধু জোর দেয়া হয়নি, দারিদ্র্য বিমোচনের বিষয়টিকেও গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হয়েছে। বাজেট সে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের একটি বিশেষ পদক্ষেপ।
এবার আসা যাক ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেট থেকে আমরা কী আশা করতে পারি। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো বাজেট ব্যয়, তবে এটা মূল বিষয় নয়। ব্যয় প্রতি বছরই কিছুটা বাড়ে, এবারও বাড়বে। অর্থনীতির আকার বড় হচ্ছে, চাহিদা বাড়ছে, বিনিয়োগ-উত্পাদন বাড়ছে, জনসংখ্যা বাড়ছে ফলে বাজেটের পরিমাণও বাড়াতে হবে। এ বিষয়ে প্রধান লক্ষ্য হবে, ব্যয়ের গুণগত মান উন্নত করা। বাজেটে মান উন্নয়নে কোনো পদক্ষেপ আছে কি না, সেটিই বরং দেখার বিষয়। সরকারি ব্যয়ের মুখ্য উদ্দেশ্য হলো, অর্থনীতির উত্পাদনশীলতা বাড়ানো। সব ক্ষেত্রে বিনিয়োগ সরকার করবে না। নির্দিষ্ট কতগুলো জায়গায় বিনিয়োগ করবে সরকার; যেমন অবকাঠামো নির্মাণ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, মানবসম্পদ তৈরির মতো সামাজিক খাতে। এসব ব্যয়ের গুণগত মান ভালো হলে উত্পাদনশীলতা বাড়বে। আশা করা যায়, ব্যয়ের গুণগত মান উন্নয়নে নির্দিষ্ট কিছু ঘোষণা এবারের বাজেটে থাকবে। ২০১২-১৩ বছরের বাজেটটা আসছে এমন একসময়, যখন দেড় বছর অবশিষ্ট রয়েছে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের। সুতরাং বাজেটে রাজনৈতিক প্রভাব পড়বে না, সেটাও বলা মুশকিল। এটা শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক দেশে এ ধারা বিদ্যমান। জাতীয় নির্বাচন সামনে এলে তাকে লক্ষ্য রেখে নীতি-পরিকল্পনা প্রণীত ও তা বাস্তবায়ন হবে, সেটাই স্বাভাবিক। এটা গণতন্ত্রের নিয়ম। এটা আমাদের এখানে আছে, ভারতে আছে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রেও দেখা যায়। এখানে একটা বিষয় বলা দরকার, যুক্তরাষ্ট্রে বাজেট নিয়ে আমাদের মতো এত আলোচনা হয় না। কখন যে বাজেট পাস হলো, কংগ্রেস পাস করে দিল— এটা অনেকেই হয়তো জানে না। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য বাজেট প্রভাবশালী নীতিনির্ধারকও বটে। সে জন্য বাজেট নিয়ে সবারই একটা প্রত্যাশা থাকে। এর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তা-ই আলোচনা হয়।
রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে কিছু কৌশল থাকে বাজেটে। অভ্যন্তরীণ রাজস্ব বাড়ানো গেলে বিদেশী ঋণ ও অনুদানের ওপর নির্ভরশীলতা কমবে। এটি চিন্তাভাবনায় রাখতে হবে আমাদের। রাজস্ব বাড়ানোর কিছু পদক্ষেপ গত দু-তিন বছরে নেয়া হয়েছে। এর সুফলও এরই মধ্যে পেতে শুরু করেছে অর্থনীতি। গত দু-তিন বছরে রাজস্ব আহরণ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এটা উল্লেখযোগ্য অর্জন। এ ক্ষেত্রে বসে থাকা চলবে না, ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। কিছু কিছু নীতি যেমন অনলাইন ট্যাক্স পেমেন্ট, নতুন ভ্যাট ও আয়কর আইন প্রণয়ন প্রভৃতি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে শুল্কনীতিতে তেমন একটা পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে, এর হার ক্রমে বাড়ছে। গত তিন বছরে শুল্কের গড় হার বেড়ে গেছে। তিন বছর আগে যেখানে ২৩ শতাংশ ছিল গড় শুল্ক, সেটা গত বছরে ২৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আশা করব, আগামী বছর কিছুটা কমবে এটি। গত ২০ বছরে আমরা যে ধারা দেখেছি, বর্তমান অবস্থা তার বিপরীত মনে হচ্ছে। আগে গড় শুল্ক ক্রমেই কমেছে। ইদানীং গড় শুল্ক বৃদ্ধির কৌশল বোঝা কঠিন। কয়েক বছর ধরে লক্ষ করা যাচ্ছে, কাস্টম ডিউটির ওপর বিভিন্ন ধরনের প্যারা ট্যারিফ বসানো হচ্ছে। সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি, রেগুলেটরি ডিউটি যখন-তখন আরোপ করা হচ্ছে। অথচ শুল্ক আরোপের ব্রড একটা নীতি থাকা উচিত। এভাবে শুল্ক আরোপের কারণে বিনিয়োগ, ব্যবসা, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। শিল্পায়নেও এটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে, কীভাবে দীর্ঘ মেয়াদে শুল্কনীতির সমন্বয় করা হবে। এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শুল্কনীতি নির্ধারণ করা গেলে নীতির দ্বন্দ্ব হবে না বরং ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার উদ্দেশ্য পূরণ হবে বলে আশা করা যায়।
বাজেটের যে অংশটার দিকে সবার চোখ পড়ে, সেটা হলো ঘাটতি। উন্নয়শীল দেশ হিসেবে বাজেটে ঘাটতি থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। সরকারের পক্ষেই কেবল আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি করা সম্ভব। কারণ সরকারের হাতে অনেক উপায় থাকে অর্থ সংগ্রহের। তারা বিদেশ থেকে ঋণ নিতে পারে। অনুদানও আসে এ ঘাটতি পূরণের জন্য। অভ্যন্তরীণ খাত থেকেও ঋণ নিতে পারে সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংক ও জনগণের কাছ থেকে ঋণ নিতে পারে তারা। লক্ষণীয় হচ্ছে, ঘাটতি অর্থায়ন নিয়ে। কীভাবে অর্থায়ন করা হচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করে অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি। সবচেয়ে কষ্ট ইফেকটিভ ও লো-কস্ট ফিন্যান্সিং হচ্ছে বিদেশী ঋণ ও অনুদান। আমরা যে বিদেশী ঋণ পেয়ে থাকি, সেটাকে বলা হয় সরকারি উন্নয়ন সহায়তা বা অফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিস্ট্যান্স সংক্ষেপে ওডিএ। এলডিসিভুক্ত দেশ হওয়ায় সস্তায় এসব ঋণ পেয়ে থাকে বাংলাদেশ। বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান যেগুলো আছে যেমন বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এদের ঋণ বলতে গেলে সুদমুক্ত। নামমাত্র সার্ভিস চার্জ আদায় করে তারা। দেশের অর্থনীতির ওপর এর প্রভাব ইতিবাচক। অভ্যন্তরীণ উত্স আছে দুটো। একটা হলো ব্যাংকব্যবস্থার মাধ্যমে ঘাটতি অর্থায়ন। তবে সরকার যদি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বড় আকারের ঋণ নেয়, সেটা মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করে। সুতরাং যত কম এমন ঋণ নেয়া যায়, ততই ভালো। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে অর্থ সংগ্রহ করে সরকারকে ঋণের জোগান দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার এটা একটা উপায়। তবে এতে ক্রাউডিং আউট ইফেক্ট দেখা দেয়। বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে অর্থ সরকারের কাছে চলে গেলে বেসরকারি খাতে অর্থের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। সে সময় ঋণসংকটে ভোগে বেসরকারি খাত। দ্বিতীয় যে উত্স থেকে সরকার অর্থ সংগ্রহ করতে পারে, সেটি হলো সঞ্চয়পত্র। সঞ্চয়পত্রের সুদের হার অনেক বেশি। প্রতি বছরই বাজেটে ঘাটতি থাকে এবং সরকার ঋণ করে সেটি মিটিয়ে থাকে। সুখবর হলো, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পাবলিক ডেট অভ্যন্তরীণ ও বহিস্থ মিলে এখনো জাতীয় উত্পাদনের মাত্র ৪০ শতাংশ। এটা কম। আমাদের বিদেশী ঋণের দায় আরও কম, মোট জিডিপির ১৫-১৬ শতাংশ। সব মিলে বাংলাদেশের ঋণমান বেশ ভালো। বিশ্বব্যাংকের মূল্যায়নে বাংলাদেশ স্বল্প ঋণগ্রস্ত দেশ। মুডিস ও স্ট্যান্ডান্ড অ্যান্ড পুওরস উভয় রেটিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ভালো।
আশা করব, বাজেটের মাধ্যমে জিডিপির প্রবৃদ্ধি আরও বাড়ানো হবে। ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী এটি ২০১৫ সালে ৮ শতাংশে উন্নীতকরণের কথা। ২০১০-১১ অর্থবছরে আমরা ৬ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব মতে, ২০১১-১২ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১২-১৩ অর্থবছরে লক্ষ্য হবে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। এটা অসম্ভব নয়। এক বছর প্রবৃদ্ধি কম হলে পরের বছর সেটা পুষিয়ে নেয়া যায়, যদি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ভালো থাকে। ইউরো জোনে অর্থনৈতিক সংকট বিরাজ করছে এখন। এটা মিটলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সুফল মিলবে। বাংলাদেশের রফতানির একটি বড় অংশ ইউরো জোনে যায়। সুতরাং এখানে সংকট বিরাজ করলে তার নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ে। মনে রাখতে হবে, আমাদের অর্থনীতি রফতানিনির্ভর। রফতানির অবস্থা খারাপ হলে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আগামী বাজেটে এটি দেখতে হবে। তবে এটা উচ্চাভিলাষী বলা যাবে না। আন্তর্জাতিক অবস্থার সঙ্গে আমাদের বিদ্যুত্-গ্যাস পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে। অবকাঠামোর যে দুর্বলতা আছে, আশা করি ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটে সেটি মেটানোর ব্যবস্থা থাকবে। তাহলেই ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন কঠিন হবে না।
ভর্তুকি ব্যবস্থাপনাও বর্তমানে বড় একটি সমস্যা হিসেবে দেখা যাচ্ছে। গত দু-তিন বছরে ভর্তুকির পরিমাণ বেড়েছে। তবে তা মোট জিডিপির ৫ শতাংশ সীমার মধ্যে রয়েছে। বাজেট ঘাটতি এবারও মোট জিডিপির ৫ শতাংশে রাখার চেষ্টা থাকবে বলে প্রত্যাশা। এমন লক্ষ প্রতি বছরই নির্ধারণ করা হয়, কিন্তু ৪ শতাংশের বেশি ব্যয় কখনো হয়নি। এটা না হওয়ার পেছনে রয়েছে এডিপি বাস্তবায়নের দুর্বলতা। কোনো অর্থবছরেই এডিপি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায়নি। এডিপি বরাদ্দ ব্যয়ের সমস্যা রয়ে গেছে; তদুপরি ভর্তুকি টানতে গিয়ে ঘাটতি বেড়ে যাচ্ছে। তেলনির্ভর বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপন ও সেগুলো থেকে উচ্চদামে বিদ্যুত্ ক্রয়সংক্রান্ত সামগ্রিক প্রক্রিয়ায় বিপুল অঙ্কের ভর্তুকি জোগাতে হচ্ছে সরকারকে। এটা দেশের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটাকে পোষানো সম্ভব রাজস্ব বৃদ্ধির মাধ্যমে ও দাম বাড়িয়ে। এটা কীভাবে কমিয়ে আনা হবে, তা দেখতে হবে। এ ক্ষেত্রে একটি উপায় হচ্ছে, বিদ্যুত্-জ্বালানির দাম বাড়ানো। এটা না করে উপায়ও নেই। ভর্তুকি না কমিয়ে আনলে বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে নিঃসন্দেহে সমস্যা দেখা দেবে, যেমনটি দেখা গেছে ২০১১-১২ বাজেটে। ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে বলে আশা করি। বেশকিছু আর্থিক চ্যালেঞ্জ আছে, যেগুলো এবার মোকাবেলা করতে হবে আমাদের। ব্যবস্থাপনা উন্নত করা গেলে ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা কঠিন কিছু নয়। তবে এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট, অভ্যন্তরীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন, সর্বোপরি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি। প্রত্যাশা থাকবে, এগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেবে সরকার।
লেখক: অর্থনীতিবিদ
চেয়ারম্যান, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)